সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন, ইসরাইল-ফিলিস্তিনের সমস্যা অদম্য নয়। যদি প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তবে আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব। সেইসঙ্গে শিগগিরই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের সাইডলাইনে বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আরব নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, সব অনিষ্পন্ন ইস্যু সমাধানের জন্য ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে হবে। আমরা এসব সমস্যাকে অদম্য মনে করি না।’
‘যদি আন্তরিক সদিচ্ছা থাকে—আর আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানি যে তারা প্রস্তুত এবং যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবধর্মীভাবে এসব ইস্যু মোকাবিলা করতে আসবে—তাহলে আমরা তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যা টেকসই, কার্যকর এবং প্রতিবেশী ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে সক্ষম হবে।’
প্রিন্স ফয়সাল আশা প্রকাশ করেন, ‘শিগগিরই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন হবে এবং এটিই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার একমাত্র কার্যকর পথ।’তিনি বলেন, ‘এটি কি নিকট ভবিষ্যতে হবে? আমি অবশ্যই আশা করি হবে, কারণ এটাই আমাদের অঞ্চলের সবার জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার একমাত্র টেকসই পথ।’প্রিন্স ফয়সাল উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তি ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত, আর টেকসই শান্তির জন্য চূড়ান্ত মর্যাদা নিয়ে সুসন্ধিচ্ছন্ন আলোচনার প্রয়োজন।তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ভিত্তি রয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা প্রস্তাবগুলো স্পষ্টভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। তাতেও একইভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভিত্তি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত ছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ১৯৬৭ সালের সীমানাই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সীমানা হিসেবে স্বীকৃত।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রিন্স ফয়সাল আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবিক সহায়তার ব্যাপকতাকে তুলে ধরলেও সতর্ক করে বলেন, পুনর্গঠন অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অংশ হতে হবে, সাময়িক সমাধান নয়।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, গাজার জরুরি সহায়তার জন্য যে বিপুল পরিমাণ সাহায্য এসেছে, তা থেকেই বোঝা যায় পুনর্গঠনের প্রতি অঙ্গীকার রয়েছে। তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যখন আমরা আশা করি দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাব, তখন এটি যেন সাময়িক অবস্থা না হয়।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘পুনর্গঠন অবশ্যই টেকসই হতে হবে এবং সরাসরি রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে।’প্রিন্স ফয়সাল বলেন, ‘আমি মনে করি, গাজার জরুরি সহায়তার পাশাপাশি পুনর্গঠনও অবশ্যই একবারে ও চূড়ান্তভাবে টেকসই করতে হবে। আর এজন্যই প্রয়োজন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মর্যাদা নির্ধারণে একটি চূড়ান্ত চুক্তি।’তিনি সাংবাদিকদের আরও জানান, আরব ও মুসলিম দেশগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পশ্চিমতীর দখলের ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছিল।
তিনি বলেন, ‘কিছু দেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল যে, পশ্চিম তীরের যেকোনো ধরনের দখল শান্তির সম্ভাবনা, শুধু গাজায় নয় বরং মোটেও কোনো টেকসই শান্তি অর্জনের সম্ভাবনাকে হুমকির মুখে ফেলবে। আর আমি আত্মবিশ্বাসী যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান বুঝেছিলেন।’